ওসমানীনগর: আমরারে বিনা দোষে মামলাত ফাসাইছইন, মামলা দিয়া বাড়ী ঘর ছাড়াইছইন। মেম্বার উইযাওয়ায় এখটা বাদে বাদে এখটা ঘটনাত আমরারে ফেসাইরা। বেটা মানুষ বাড়ী ছাড়ায় আমরার বাড়ী ঘরো হামলা খররা, দরজা জানালা ভাংছইন, আমরার তিন চাইরটা গাড়ী ভাংঙ্গিলিছইন। ইলা কিলা আমরা থাকমু। মেম্বাররে বাড়ী ছাড়া খরিয়া আমরারে অখন বাড়ীত তাখতে দিরা না। এ কথাগুলো চরম আতংকের সাথে বলছিলেন ওসমানীনগর উপজেলার ইশাগ্রাই গ্রামের জয়নুল হক ধন মিয়া মেম্বার এর স্ত্রী রোসনা বেগম।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ফাঁসানো মামলায় ধন মিয়া মেম্বার ১নং আসামী হওয়ার কারনে আজ প্রায় একমাস তিনি বাড়ী-ঘর ছাড়া। প্রতিপক্ষ তাকে ঘায়েল করতে এ মামলায় তাকে আসামী করে হয়রানী করতেছে। অথচ তিনি এ মারামারি রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।
সরেজমিনে পরিদর্শণ কালে দেখা যায়,উপজেলার ৩নং পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের ৫নং ওর্য়াডের সদস্য,ঈশাগ্রাই গ্রামের মৃত দরস উল্লার পুত্র জয়নুল হক ধন মিয়া। শিপন হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছেন ধন মিয়া। এই সুবাধে তাদের প্রতিপক্ষ ধন মিয়া মেম্বার ও তার নিকট আত্মীয়দের বাড়ি-ঘর, গাড়ী ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট করে। তাদের আক্রমনে ধন মিয়া মেম্বারের একটি কার, ফরুক মিয়ার একটি সি.এন.জি এবং আব্দুল হাকিমের তিনটি বড় ষাড়, মোস্তফা মিয়ার ধান, আলা মিয়ার ধানের মেশিন ও ট্রাক্টর সহ সকলের বাড়ির মূল্যবান সামগ্রী ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। ধন মিয়া মেম্বারের পাকা ঘরের সামনে ভাঙ্গা কার ও সিএনজি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ধন মিয়া মেম্বারের পাঁকা ঘরের দরজা-জানালা এমনকি ঘরের আসবাবপত্রের ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। পুরুষহীন নিরব নিস্তবদ্ধ ধন মিয়া মেম্বারের বাড়ীতে বসবাসরত তার একমাত্র স্ত্রী চরম আতংকে রয়েছেন। তাই ধন মিয়া মেম্বারের কয়েকজন নিকট আত্মীয় উক্ত সাজানো মামলার সুষ্ট তদন্ত সহ ন্যায় বিচারের জন্য ইতিমধ্যে সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ই মে ২০২০ইং, বুধবার ইফতারের পূর্ব মূর্হুতে আমাদের গ্রামের ছোরাব মিয়া ও মানিক মিয়ার মধ্যে গরুর ধান খাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে ছোরাব মিয়ার পক্ষে আশিক মিয়া ও তার ছেলেরা মানিক মিয়া ও এলাইছ মিয়াকে আক্রমন করে। তখন এই পরিস্থিতি শুনে উক্ত ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নুল হক ধন মিয়া দ্রুত ঘটনা স্থলে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু উভয় পক্ষের কেউই কথা না শুনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন দু-পক্ষের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র,শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। এতে শিপন মিয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব শক্রুতার জের ধরে ছোবার মিয়া ও তাদের উষ্কানিদাতা একই গ্রামের লন্ডন প্রবাসী আওলাদ মিয়া ও তার ছোট ভাই আনিসুর রহমানের র্নিদেশে আশিক মিয়ার বড় ছেলে রিপন মিয়া, জয়নুল হক ধন মিয়া মেম্বারকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে শিপন হত্যা মামলার প্রধান আসামী, তাহার বড় ছেলেকে ২নং আসামী করে ওসমানীনগর থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
তাদের উষ্কানিতে এই গ্রামে অতীতে আর দুই তিনটি মারামারির ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষের সাথে ধন মিয়া মেম্বার বা তার পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই। তারপরও পূর্ব শক্রুতার জের ধরে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। মূলত কিছু দিন পূর্বে আওলাদ মিয়া ও তার ছোট ভাই আনিসুর রহমানের কাছে ধন মিয়া মেম্বার মসজিদ সংস্কার উপলক্ষে লন্ডনে আদায় কৃত চাঁদার হিসাব চেয়ে ছিলেন। আওলাদ মিয়া ও আনিসুর রহমান মসজিদ সংস্কারের জন্য লন্ডনে ৪৫ লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেছিলেন। তারা দু’ভাই উক্ত উত্তোলনকৃত ৪৫ লক্ষ টাকার হিসাব সঠিক ভাবে দিতে পারেনি। পুরো টাকা থেকে খুব অল্প সংখ্যক টাকা মসজিদের সংস্কারের কাজে ব্যয় করে বাকি টাকা তারা দু’ভাই মিলে আত্বসাত করে নেয়। মেম্বার সহ এলাকার লোকজন উক্ত টাকা মসজিদে দেয়ার জন্য চাপ দিলে তখন তারা দু’ভাই তাদের সহযোগীদের দিয়ে বিভিন্ন সময় জয়নুল হক ধন মিয়া মেম্বারকে আক্রমন করে এবং হেনস্থা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে তারা দু’ভাই মিলে দেশ বিদেশে মেম্বারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করে। সেই শত্রুতার জের ধরে আশিক আলী ও মামলার বাদী নিহতের ভাই রিপন মিয়াকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে উক্ত শিপন হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য মেম্বারকে প্রধান আসামী -করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আলাপকালে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ মোবারক বলেন, মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে আসামী গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে স্মারকলিপি প্রদানের বিষয়ে এখনও তিনি অবগত নন বলে জানান।